রাব্বিকে নিয়ে লেখা...
১।
আমার রুমের দুইটা চাবি। একটা আমার কাছে আরেকটা রাব্বির কাছে থাকতো। আজকে কাজ শেষে চাবিটা অফিসে রেখে এলাম। দুই দিনের ছুটি নিলাম ঢাকায় যাবো। বের হবার সময় অফিসের গার্ড সগির ভাইকে বলে আসলাম চাবির ব্যাপারে। শুনে ওনি আমার দিকে অবাক হয়ে চাইলেন। ওনার বোকা ফেইস দেখে হাসি আসলো।
রাব্বির কাছে চাবি রাখা বা দুইটা চাবি নিজের কাছে না রাখার একটা সাইকোলজিকাল ব্যাপার আছে। হঠাৎ আমার কিছু হলে যেন অন্য কেউ আমার রেখে যাওয়া জগতে সহজেই পৌছাতে পারে। এমনিতে তালা ভেঙ্গেও ঘরে ঢুকা যায়। তবুও আমি এইরকম করে ভাবি। এমনকি আমার ফোন আর পিসির পাসওয়ার্ড, এমনকি জিমেইলের পাসওয়ার্ডও অন্যকেউ জানে। সবচেয়ে সেইফ সেই মানুষটা আমার ভাই রাব্বি। ওরে বলে রেখেছিলাম, আমার কিছু হলে আমার ফেসবুকে ঢুকে বন্ধুদের জানাইস। ও হেসে বলেছিল, “ওকে ওকে। সাথে রবিউল মামার মতো ইনবক্সের মেসেজগুলাও পইড়া আসবো।” এই কথা বলা মাত্র আমরা দুইজনে হুহু কইরা হাসি। এইযে নিজে ছাড়াও অন্যকেউ নিজের গোপন ব্যাপারে জানে, এইটা অনেক রিলাক্সিং একটা ফিলিং।
সেদিন রাব্বির বড় অসুখটা ঘটার সময় ও পিসিতে কাজ করতেছিল। তারপরে তো হঠাৎ করে কত কিছু চোখের পলকে ঘটে গেল। এর বাইরে কোনদিকে খেয়াল নাই। রাব্বিকে আইসিইউতে ভর্তি করার পরে ঘরে ফিরে দেখি ওর পিসিটা চালুই ছিল। একবার ভেবেছিলাম ওর ফ্রেন্ডদের জানাবো অসুখটার খবর। রুমে ওর ফোনটাও পড়েছিল। ক্লিক করে দেখি অনেকগুলা নোটিফিকেশন আর কল। কিন্তু সাহস করে কাউকে কোনকিছু জানাতে পারলাম না। রুনা একবার বলেছিল ওর ফোনটা চালু আছে। কি করবে? আমি কি আমার কাছে রাখবো কিনা। কোনকিছু না ভেবে বললাম ফোনটা অফ করে ঘরে রেখে দিতে।
খুব ঘনিষ্ঠ কারোর অসুখের সময় কোন পরিকল্পনা কাজ করে না। এমনকি লজিকালও হইতে পারি না। আমি নিজেকে পরিশ্রমী আর শক্ত মনের মানুষ ভাবি। কোনকিছু অসুখ কিংবা মৃত্যুর ঘটনাতে শক্ত থাকতে পারবো এইরকম মনে হয়। অথচ সেদিন হাসপাতালে আইসিইউ ঘরের সামনে বসে হাউমাউ করে কাদতে থাকলাম। এমনকি কালকে রাতে রাব্বির ব্রেনে অপারেশনের সময় রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অফিসে বসেছিলাম। ভাইয়া, ইমন, আব্বা আর করিমের সাথে তখন কথা হচ্ছিল। আমি রাস্তায় পায়চারি করছিলাম। মনে হচ্ছিল ঘরে গেলে দম বন্ধ হয়ে যাবে। নিজেকে যতটা শক্ত আর সাহসী ভেবেছিলাম, দেখি তার কিছুই কাজ করছে না। ভীতু আর ইমোশনাল একটা দূর্বল মনের মানুষ হয়ে গেলাম।
যাইহোক, ভাই এর অপারেশনের পরে ডাক্তার ৩ দিন পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এর পরে জ্ঞান ফেরার কথা। ডাক্তার বলেছে ইয়াং ম্যানরা রিকভার করতে পারে অনেক সময়। তবে ব্রেনের যেইখানে ব্লিডিং হইছে তাতে প্যারালাইসিসের সম্ভাবনা প্রবল।
ভাইয়া, করিম, ইমন, শুভ ভাই এরা গত তিনদিন ধরে এত পরিশ্রম করেছে। সেইটার ভাল ফল মিলবে এই আশা করি। আমাদের পরিবারে ভাইয়েরা মিলে অনেক বড় বড় অসুখে একসাথে ফাইট করেছি। দাদীর ক্যান্সারের সময়, ছোট চাচীর হার্টের অপারেশনে, আরিয়া জন্ম হবার কালে, রাব্বির অসুখে সহ আরও অনেক সময় একসাথে মিলে লড়েছি। এমনকি আমরা ভাইয়েরা মিলে ৬৫ ব্যাগের বেশি রক্ত দান করেছি বিভিন্ন অপরিচিত রোগীকে। সবকিছুতে রাব্বি এতদিন নিজে থেকেছে। আজকে ভাই নিজেই অসুখে পড়েছে। সুস্থ হয়ে ফিরে আসো ভাই আমার। আমরা তোকে ভীষণ ভালবাসি।
২৩/১০/২০২৩
২।
বেঁচে থাকতে চাওয়া তো কোন বিলাসী কিছু নয় যে
তার জন্য এত উৎকন্ঠা হবে। এটা মানুষের অধিকার।
সে বেঁচে থাকে প্রিয়জনের সাথে অধিক সময় কাটিয়ে
জীবনকে উপভোগ করতে। তাই দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়।
সেই পথে দেখে, একটা আধেকখানা চাঁদ
শহুরে আকাশে ভেসে আছে৷ তাই দেখে মনে হয়
বেঁচে থাকা কোনরূপ আনন্দময়।
২৬/১০/২০২৩
৩।
আমার ভাইটা গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাসায় আছিল দুইদিন রিলাক্স করার জন্য। শুক্রবার সারাদিন হাসিখুশী আড্ডা দিলাম। কতকিছু আরাম করে খাইলাম। কত পরিকল্পনা করলাম। তারপর থেকে আজকে ছয়দিন হইয়া গেল আর চোখ খুলতেছে না। এত অসহায় গত দশ বছরের মাঝে আমার লাগে নাই। এত উৎকন্ঠা। এত ভয়। তবে আমরা আশা করি ভাই কালকেই চোখ মেলবে। নাহলে পরশু। নাহলে তার পরদিন। ভাই চোখ মেলবেই। প্রয়োজনে ভাইয়ের জন্য ফান্ড রেইজ করবো। এখন আপাতত ঢাকা মেডিকেলে একটা আইসিইউ সিটের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতেছি। সিট মিলতেছে না একেবারে। কতজনকে বললাম! কাদের সহযোগিতায় যে একটা সিট পাবো তাও বুঝতে পারতেছি না।
২৬/১০/২০২৩
৪।
কত বড় অসুখ করলে নয় দিন ধরে আইসিইউতে থেকে উন্নত চিকিৎসা পাবার পরেও দেহ এখন পর্যন্ত ঠিক হচ্ছে না। এখনও ভাই নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারে না। যন্ত্র খুলে দিলে প্রেশার বেড়ে যেয়ে দেহ অস্থির হয়ে যায়। এতদিনে মাত্র চোখ খুলতে পেরেছে। হাত ধরেছে কয়েকবার। একবার নাকি ইশারাও করেছে৷ জ্ঞানের মাত্রা একেবারে ডেথের কাছাকাছি চলে যাবার পরেও ধীরেধীরে এইটুকু উন্নতি হয়েছে দেহের।
গত কিছুদিন ধরে ঢাকায় থাকা আর্থিক আর মানসিক ভাবে কষ্টকর আর কঠিনতর হয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর ক্যাওয়াসের ফলে অসুবিধার মাত্রা বেড়ে গেছিল। তাই আজকে ভাইকে সিলেটে আনা হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেলে আইসিইউতে থাকবে সুস্থ হবার আগে পর্যন্ত।
আমাদের ভাই সুস্থ হয়ে যাবে এখন দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে। অথচ এই বিশ্বাসটাও চলে যেতে শুরু করেছিল। কয়েকবার এমনও হয়েছিল, পাশের বেডের রোগীদের মরণ দেখে ভয়ে আর দু:খে বাথরুমে ঢুকে বারেবারে চোখ ধুয়েছি। একবার তো হাসপাতাল ছেড়ে যাবার সময় এক মৃত রোগীর আত্মীয়দের কান্না দেখে রাস্তাতেই চোখের পানি ঝরেছে। কিযে একটা ট্রমাটিক সিচুয়েশন সেইখানে! তার মাঝেও হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করেছি। ভাইয়েরা মিলে একসাথে বিভিন্ন গল্প করেছি। নিয়ম করে খেয়েছি, ঘুমিয়েছি।
সিলেটে আসার পরে এইবার শুরু হবে নতুন ফাইট। এইটা রাব্বির ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে থাকার পরেও সুস্থ হইতে চাওয়ার ফাইট। আগের ফাইটটা ছিল যেকোন উপায়ে অন্তত বাচাতে পারার ফাইট৷ এই অসুখের ঘটনায় কতকিছু দেখেছি চোখের সামনে। ফিল করেছি। শিখেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটু বাচতে চাওয়ার জন্য মানুষের কত আকুতি! সেই আকুতি নিজেরও।
২৯/১০/২০২৩
৫।
ওইযে দূরের ভবন। এটি আইসিইউ। তার উপরে পূর্ণিমার চাঁদ আসে নিয়মিত। আইসিইউতে অচেতন ঘুমায় তারা জানেনা সেই খবর। কেউ কেউ পূর্ণিমার আলো গায়ে মাখতে পারে না আর। তাদের জন্য গান বানায় চাঁদের বুড়ি৷ ঘুমাও বাউন্ডুলে, ঘুমাও।
৩১/১০/২০২৩
৬।
রাব্বির অসুখটার আজকে পঞ্চাশ দিন পাড় হইল। নিজের মনোবল আর সবার ভালবাসায় আমাদের ভাই এখনও অসুখের সাথে ফাইট করে যাচ্ছে। যদিও আইসিইউ থেকে এখনও তার মুক্তি হয় নাই। তবে ভেন্টিলেশনের আর প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভেন্টিলেশন খোলা আছে৷ এখন তার দেহে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন লাগায় রাখতে হচ্ছে।
এই অবস্থায় কোন রোগীর দেহে যতটুকু পজেটিভ রেসপন্স হবার কথা সেই তুলনায় রাব্বির রেসপন্স কম। তার সেন্স ফিরেছে। কথা বললে শুনতে পায়। যদি বলি হাত উঠাও, তাহলে হাত নাড়াতে চেষ্টা করে। একটু একটু হাত নাড়াতে পারে। ঘাড় ঘুরাতে বললে একটু করে ঘুরায়। তবে দেহের বাকী অংশ নাড়াতে পাড়ছে না আর চোখে দেখছে না এখনও। বাম পাশও অবশ হয়ে আছে। দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকার ফলে দেহে যে ধরনের জটিলতা হবার কথা তার সবকিছু দেখা দিয়েছে ধীরে ধীরে।
অনেকেই জিজ্ঞাসা করে ডাক্তার কি বলেছে। ডাক্তার এক কথায় কিছু বলে না। যেহেতু রাব্বির অবস্থা জটিল ধরনের তাই বিভিন্ন টেস্ট করে করে তার চিকিৎসা করা হচ্ছে। তবে আরও দীর্ঘদিন ধরে তার সম্পূর্ণ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট দরকার। আর দরকার শারীরিক সেবা। এবং আর্থিক সহযোগিতা।
রাব্বির অসুখটা নিয়ে এত দীর্ঘ পথে যাত্রা করতে হবে এমনকি এত সিরিয়াস অবস্থা যে হয়ে যাবে এইসবকিছু আমাদের কাছে একটা দু:স্বপ্নের মত। সেই দু:স্বপ্ন প্রতি নিয়ত বাস্তবিক হয়েছে। আইসিইউ রোগীকে সেবা করার মত কঠিনতম কাজ এখন আমরা নিয়মিত করি। ডাক্তারদের পরামর্শে শীঘ্রই আমরা রাব্বিকে কেবিনে নিয়ে যাবো। এতদিন ধরে যারা আমাদের ভাই এর প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছেন তাদেরকে বলবো আপনারা আরও বেশি করে ভালবাসবেন তাকে।
রাব্বির চিকিৎসা খরচ চালিয়ে নেবার জন্য আমাদের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অনেকে রাব্বির পাশে দাঁড়িয়েছেন। আরও যদি কেউ সহযোগিতা করতে চান তাহলে জানাবেন। আমরা প্রয়োজনে আমাদের ভাইকে সুস্থ করার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাবো। তার জন্য যেকোন প্রকার পরামর্শ দিবেন আমাদেরকে। সবাই ভাল থাকবেন।
০৯/১২/২০২৩
৭।
তেষট্টি দিন পাড় হইয়া যায়। রাব্বির শরীরটা এখনও ভাল হয় নাই। মাঝে গত সপ্তাহে ওকে কেবিনে নিয়ে গেছিলাম। অসুখ হবার পরে প্রথমবারের মত ডাক্টার নার্স ছাড়া শুধুমাত্র পরিবারের কাছে ওর সেবার দায়িত্ব পড়লো। কিন্তু সেখানেও কোন উন্নতি হয় নাই। বডি আনস্ট্যাবল হয়েছিল। একই সাথে আরও অনেক শারীরিক জটিলতার জন্য ডাক্টাররা আবার তাকে আইসিইউতে শিফট করেছে। এমন সিচুয়েশনে ধীরেধীরে হতাশা বাড়ে। আর্থিক অসুবিধা প্রকট হয়। প্রবল শারীরিক কষ্ট হয়। এইসব কিছুর সাথে ফাইট করতে আমাদেরকে হিমশিম খাইতে হচ্ছে। তবুও রাব্বিকে যারা ভালবাসে তাদের সহযোগিতায় আর নিজেদের মনোবলে আমরা হাল ছেড়ে দিই নাই। এমন দুর্যোগের দিনেও যারা পাশে থেকেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সবাই সুস্থ থাকবেন এই আশা করি।
২২/১২/২০২৩
৮।
আমি আর রাব্বি ভাই — আমরা কখনোই কনভেনশনাল বড়ভাই ছোটভাই ছিলাম না ৷ দোস্তের মত থাকতাম ৷ তো জাবিতে ড্রামাটিক্সে ভাইভা'র সময় রাব্বি ভাইকে আমার গার্ডিয়ান হিসাবে পাঠানো হইলো ৷ কই আমারে টেইক কেয়ার করতে ও আসলো, কিন্তু হইলো পুরা উল্টা ৷ এয়ারপোর্ট স্টেশনে নামার আগ দিয়ে গার্ডিয়ানের ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেলে বাকীটা সময় আমারই গার্ডিয়ানরে টেইক কেয়ার করতে হইছে ৷ এই লেখাটা যখন লিখতেছি তখন বইসা আছি ফার্মগেট—খামারবাড়ি সিগন্যালে ৷ বাসায় যাইতেছি ৷ ঐ ট্রিপের আরেকটা ঘটনা মনে পড়ল এখন ৷ বাসের সেটআপ না বোঝা আমরা দুইজন কই যেন যাবো, বাসের জন্য ওয়েট করছি এই খামারবাড়ি মোড়েই ৷ সন্ধ্যার দিকের কাহিনী ৷ একটা লোকজন ভর্তি বিআরটিসির দোতলা বাস এসে থামলে আমরা উঠার পায়তারা করতেছি ৷ রাব্বি ভাই আগেই উঠে গেছে, ওর সবকিছুতে দুইশ পার্সেন্ট আগ্রহ থাকত ৷ কিন্তু আমি উঠার আগেই বাস দিছে টান ৷ আমি বাসের পিছন পিছন দৌড়াইতেছি, রাব্বি ভাই বাসের দরজা থিকা হাসতেছে এই ছবিটা ঠাস করে চোখে ভাসল ৷
একটু আগেই খবর পাইলাম রাব্বি ভাই মারা গেছে ৷ মনে হইতেছে সেই কাহিনীটারই পুনরাবৃত্তি হইল যেন ৷ রাব্বি ভাইকে নিয়ে একটা গাড়ি কই চলে যাইতেছে, আর আমি আমরা সেটার পিছু পিছু দৌড়াইতেছি ৷ রাব্বি ভাই জাস্ট চইলাই যাচ্ছে আমাদের ছেড়ে ৷ রাব্বি ভাইয়ের তখনও হাসতে থাকারই কথা ৷ পয়ষট্টি দিন আইসিউ'র ধকল শেষ হয়ে গেল তার ৷ হাসতে থাকারই কথা ওর ৷ যেমন হাসত সবসময় ৷ ওর কারনে আমরাও তো হাসতে পারতাম ৷ যেকোন ফ্যামিলি গেদারিংয়ে ও ছিল একটা অটো ব্রিদিং স্পেইস — কী কী বিচ্ছিরি হার্ডকোর মোমেন্টাম, আমরা হাসতে হাসতে লুটপাট হয়ে যাইতেছি ওর সার্কাজমে ৷ সব চোখে ভাসতেছে আমার ৷ চোখে ভাসতেছে একসাথে লুকায়ে চটি পড়া, ফেসবুক খুলে এক ছবিতে পঞ্চাশ জনরে ট্যাগ না মারলে লাইক পড়বেনা টাইপ শিক্ষা,আলুরতলের জঙ্গলে প্রথম সিগারেট আর ওর সাথে ব্রাজিল আর্জেন্টিনা মারামারি ৷ চোখে ভাসতেছে ইদ, ছোট ছোট ট্যুর আর একজন আরেকজনের উপর ডিপেন্ড করার সমস্ত ইতিবৃত্ত ৷
রাব্বি ভাই কোনদিন মারা যাইতে পারে এই কথা আমি কল্পনাও করিনাই ৷ এটলিস্ট এই বয়সে? এখন মনে হইতেছে ভাইবা রাখলে ভাল হইত ৷ নিজেরে মানাইতে পারতাম একটু ৷ মানাইতেই পারতেছিনা আমি ৷ মারা তো গেল না, সব স্মৃতি ব্যাগে বাইন্ধা নিয়া জাস্ট নাই হয়া গেল ৷ ইদগুলা কেমনে কাটাবো এখন, সিলেট গেলে সময় কেমনে কাটবে — ভাবতেও ডর লাগতেছে ৷
টাটা রাব্বি ভাই ! কাজটা ঠিক হইলো না আরকি ৷
২৪/১২/২০২৩ (রাহিম)
৯।
প্রতিদিন যায়। কাজ শেষে ঘরে ফিরি। কত কত ব্যাপারে রাব্বিরে মিস করি। অনলাইনে কোনকিছু না পাইলে নক দিয়া বলতাম, লিংক দে ব্রো। কাজ করে ক্লান্ত হইলে বলতাম, চইলা আয় ব্রো, আমার ট্রিট। আলাপ করার লোক হারাইছি আমি। কলিগদের সাথে আলাপ হয়। কিন্তু ফ্রি টাইমে এইসব বোরিং কাজের আলাপ তো আমি করতে চাই নাই কোনদিন। লাইফের আলাপ করতে চাইছি। নিজের আলাপ করতে চাইছি। ট্রান্সফার হইয়া সিলেটে আসার খবর শুইনা রাব্বির সেই কি উচ্ছ্বাস! বলতেছিল, যাক আপনি আসতেছেন। এইবার আপনার সাথে উইঠা যামু।" আমিও কত খুশী হইছিলাম। সেই সঙ্গীরে হারাইলাম আমি। মেসেঞ্জারে ওর নাম দেখলে বুকটা হাহাকার করে উঠে। মন চায় একটা নক দিয়া বলি, কই রে বাল। টায়ার্ড লাগতেছে। আয় ঘুইরা আসি।" কিছুই বলতে পারি না। কই নক দিবো। ফোন তো আমার কাছেই। এইভাবে মানুষ নাই হইয়া যায়। সেইদিন রাতে রিকাবিবাজারে সিঙ্গারা খাইছিলাম। রাতে হালকা পেট ব্যথা করেছে। স্বপ্নে দেখি রাব্বি আইসা হাজির। আমার সাথে কি ব্যাপারে আলাপ করতেছে। কিযে মায়া লাগছে। খারাপ লাগতেছিল। মাঝরাতে ঘুম ভাইঙ্গা গেছে। রাহিমরে কল করে আধাঘন্টা আলাপ করেছি। আমার জীবনে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ লোক এসেছে। বেশিরভাগের সাথেই কোন যোগাযোগ নাই আর। এইজন্য আমার কোন খারাপ লাগে না। এমন করেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি। অথচ কোন প্রস্তুতি কাজে লাগতেছে না। হাহাকার লাগে। আফসোস লাগে। আবার ফিরা পাইতে চাই, এইরকম ফিল হয়। আই মিস ইয়ু মাই ব্রাদার। আই মিস ইয়ু। আমি সারাজীবন তোকে দেখে রাখবো এই প্রমিজ করেছিলাম। সেইটা রাখতে পারি নাই। মানুষ তো থাকে না সারাজীবন। তবুও ভাবতাম কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মানুষ সারাজীবন থাকবে। তারা মরতে পারে এইটা ভাবনারও বাইরে ছিল। এইরকম মায়ার ভিতরে ঢুকায় রেখেছিল জীবন। মায়া কাটে নাই এখনও। কাটুক এইটা আমি চাইও না। আপনারা যারা এই লেখা পড়েছেন, দু:খিত হয়েন না। আসলে এত হাহাকার লাগে, এইটা কাউকে বলতে পারিনা বইলা লিখেছি। ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে সেইখানে লিখে রাখতাম।
২৪/০১/২০২৪
১০।
শুয়ারটা সবকিছু জেনে বুঝেও
চলে গেছে ছেড়েছুড়ে।
উইকেন্ডে কাকে যে ডাকি এখন
কাচ্চি খাওয়ানোর কথা বলে
খাওয়াইলো না, বললো পরে তাইলে
কত পরে সেইটাও বইলা যাইতি।
কে আইসা ক্লিয়ার করে যাবে
যাবতীয় ঝুট ঝামেলা।
বন্ধুর মায়ের সাথে প্ল্যান করে
পাত্রী দেখা শুরু করলি,
লাস্ট যাকে নিয়ে আলাপ হইল
উপশহরে বাসা, স্কুল টিচার,
ইনবক্সে গোটা কয়েক ছবি দিলি
তিনি কি সম্মতি দিয়েছিল,
নাকি রিজেকশন?
মিস্ত্রি ডেকে চুলা ঠিক করায় দিলি,
একটা আয়রণ কেনার জন্য
কতবার পচাইলি,
এখন আয়রণ কিনে দিবে কে,
কোন টিভিটা সুলভে কিনবো সেই
প্ল্যানটা করবো কার সাথে,
নেটফ্লিক্সে সাবস্ক্রিপশন করে দিলি
তিনজনে মিলে এক আইডি চালাই
কে কি মুভি দেখে তা নিয়ে করি তামাশা,
সেই তামাশা বন্ধ হইল।
প্রেমিকা নিয়ে ঘুরতে যাবার প্ল্যান
ঝুলায়ে রেখে গেলি।
চাকরি হলে নিশ্চিন্তে বিয়ে করবি
সেই শখটাও তো পূরণ হলো না।
কেয়ারলেস মার্কা কথা শুনে
মেজাজ দেখাতাম প্রায়ই,
বলতাম সিরিয়াস হইবি না জীবনে?
কথা শুইনা হাসতি বোকাচোদার মত
আর বলতি আমি তো ইয়াং, চিরতরুণ
বয়স বাড়ে না আঠারোর বেশি।
সেই লেস লাইফই ভাল ছিল বোধয়
নয়া একটা বৎসর আসছে
কি যে করি এখন
কতকত প্ল্যান প্রোগ্রাম
সব গেছে উলটপালট হয়ে।
এক কাপড়ে দুইজনেই চলেছি কত
সেই কাপড় দেখে নিজেকে এখন
অন্যকেউ মনে হয় প্রায়শ।
যেন নিজেই মরে গেছি
এমন একটা ফিলিং হয়।
তুই তো এমনই
আত্মার সাথে মিশেছিলি
সেই জনকে হারাইলাম বছর শেষে।
হারাইলাম জীবনের তরে।
১১।
মাছরাঙ্গার মন খারাপ কেন
শীতকালীন দুপুর দেখে মনে হয়
প্রবল অনুভূতিও গায়ে সয়
তখন পাহাড়ি ডোবার ধারে
একাকী মাছরাঙ্গা
বৈদ্যুতিক তারে বসে
কোন আহার নেই জেনেও
অপলক ডোবার দিকে চেয়ে থাকে।
কি ভাবনা তাহার
পরিবারের কথা কি
কারো অসুখ করেছে জটিল নাকি
আটকে গেছে মায়ার বাধনে
দায় নিয়েছে কাধে কিছু
সেই ভারে দুশ্চিন্তা জেগেছে মনে
এমনই দুপুর কেটেছে মাছরাঙ্গার সনে।